হাওজা নিউজ এজেন্সি: সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইরানিদের মধ্যে একটি দৃঢ় জাতীয় ঐক্য বিদ্যমান। বিশেষত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে তারা কেবল একটি নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে নয়, বরং জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আমেরিকা ও ইসরায়েলের সামরিক হামলা সত্ত্বেও ইরানের পারমাণবিক কাঠামো অনেকাংশেই অক্ষত রয়েছে, যা ইরানি জনগণের ঐক্য ও প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি প্রতিচ্ছবি।
আশুরা ও শিয়া চেতনা: ঐক্যের আত্মিক ভিত্তি
শত্রুরা যখন ইরানিদের একতাবদ্ধ মনোভাব ও প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বীকার করে নিচ্ছে, তখন এই শক্তির মূল উৎস হিসেবে ইসলামি ও শিয়া বিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হবে আত্মঘাতী। এমনকি যারা শিয়া নন, তারাও ইমাম হোসেইন (আ.) এবং কারবালার শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি অভিন্ন জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছেন।
ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকেই নেতৃত্ব ও প্রতিরোধের প্রেরণা
সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক হুজ্জাতুল ইসলাম হাবিব বাবায়ী বলেন, “শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ ইসলামী ভাবধারার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ধর্মীয় বিশ্বাসই ইরানি সমাজে নেতৃত্ব ও সচেতনতার ভিত্তি স্থাপন করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইরানি পরিচয় ও ঐতিহ্য আজ আর পরস্পরবিরোধী নয় বরং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উপাদানের—বিশেষত আশুরা ও মহররমের ভাবনায়—একটি সুসংহত রূপ নিয়েছে। এই ঐক্যের সুযোগ আমরা নষ্ট করতে পারি না।”
ধৈর্য ও প্রতিরোধ: সাফল্যের চাবিকাঠি
ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ২০১৫ সালের এক ভাষণে বলেন, “যেখানে জাতি ধৈর্য ও প্রতিরোধ দেখিয়েছে, সেখানে তারা নিশ্চিতভাবেই সফল হয়েছে।” জাতির ঐক্য ও দৃঢ়তাই তাঁদের বিজয়ের মূলে ছিল।
জাতীয় পরিচয় ও ঐতিহ্য রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন
সাংস্কৃতিক গবেষক হামিদ শাহ-আবাদি বলেন, “জাতীয় ঐক্য ও প্রতিরোধের চেতনা জাগ্রত করতে মিডিয়া, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বিত কার্যক্রম চালাতে হবে।” তিনি পাঠ্যক্রমে সংস্কার, স্থানীয় ঐতিহ্যভিত্তিক কনটেন্ট তৈরির প্রয়োজনীয়তা এবং তরুণদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রক্ষার ওপর জোর দেন।
তাঁর মতে, “সামাজিক মাধ্যমে শত্রুর তৈরি বিভ্রান্তিকর বার্তা ও ন্যারেটিভ তরুণ সমাজে প্রবেশ করছে, যা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভুয়া সংবাদ এই হুমকিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
সমাধান: দেশীয় চিন্তা ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ উপস্থিতি
শাহ-আবাদি বলেন, “আমাদের উচিত—আকর্ষণীয়, সত্যনিষ্ঠ দেশীয় কনটেন্ট তৈরি করে ডিজিটাল মাধ্যমকে শক্তিশালী করা, এবং বাস্তবিক সংযোগ বজায় রেখে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা।”
আপনার কমেন্ট